আমার গাজিপুর আমার বাংলাদেশ
নামঃ মিজানুর রহমান, কলেজঃ আব্দুল আওয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বিভাগঃ ব্যবসায় শিক্ষা, রোলঃ ৫৬, মোবাইল নাম্বারঃ 01760001859
(১)
হল্যান্ডের আমস্টাম শহরের এক চা স্টলে টিভিতে বাংলাদেশের টি২০ ম্যাচ চলছিলো। স্কুল পড়ুয়া এক বালক কিছুখন সময় পার করার জন্যে টিভির সামনে বসেছিলো। তখন বোলিংয়ে বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন মাশরাফি বল করে যাচ্ছেন, অল্প রানআপে। এতেই ব্যাটসম্যান বার বার পরাস্ত হচ্ছেন।বালকের প্রথম দেখায় মাশরাফি ভালো লেগে যায়। তখন মাশরাফিকে খুজতে গিয়ে জানতে পারলো বাংলাদেশের কথা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের কথা। একটা জাতি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তা ভেবে সে খুবই অবাক হলো। তার পর যখন জানতে পারলো ১৯৭১ সালে সেই একই জাতি স্বাধীনতার জন্য নয় মাস যুদ্ধ করেছে তাও প্রায় নিরস্ত্র হাতে এবং অস্ত্রধারীদের ভুলুন্ঠিত করে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তা তাকে আরো বেশি মুগ্ধ করলো।
(২)
সেই যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের সমভ্র্ম আর ত্যাগের ইতিহাস তার ছোট্ট চোখে পানি এনে দিল। সে বাসায় ফিরে দেখলো বাবা বাসায় আছে কিন্তু মা অফিসে। সে নিজের রুমে গিয়ে অঝরো কাদতে শুরু করলো। বাবা তার একমাত্র ছেলেকে কাদতে দেখে খুবই অবাক হয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো তুমি কাঁদছো কেন? সে তখন বললো বাবা একটা দেশের ইতিহাস পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি তাই আমার চোখে জল তাই এতো কান্না। একটা জাতি এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তা কল্পনাতীত। বাবা জানতে চাইলেন সেই দেশটা সেই জাতির নাম কি? ছেলেটি বললো বাঙ্গালী আর বাংলাদেশ।
(৩)
ছেলের কথা শুনে বাবা চুপ করে গেলেন।তাকে চুপ থাকতে দেখে ছেলেটি বললো বাবা তুমি হঠাৎ চুপ করে গেলে কেন? তুমিকি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানো? আমার খুব ইচ্ছে ওই দেশটাতে একবার ঘুরতে যাবো।
বাবার চোখেও তখন জল এসে গেল। বাবা বললেন ওই দেশটা তোমার রক্তে মিশে আছে। তোমার মম ওই দেশেই জন্মেছে।বাবার কথা শুনে ছেলেটি ভীষণ ভাবে চমকে উঠলো। তার এগার বছরের জীবনে সে কোন দিন মমকে এসব কথা বলতে শোনেনি। মম দেখতে একটু অন্যরকম তা বলে মম কখনো মুখে একটা বাংলা কথাও উচ্চারণ করেনি। মমের উপর তখন তার ভীষণ রাগ হলো। অফিস থেকে ফিরে আসার পর সে আর মমের সাথে কথা বললো না। তার যে ভীষন অভিমান হয়েছে। মম জানতে চাইলেন আমার রাজপুত্রটার আজ মুড অফ কেন? আমার সাথে আড়ি দিছে কেন? সে তখন ভীষন রাগ দেখিয়ে বললো I hate you mom, I really hate you. ছেলের কথা শুনে ভীষন রকম চমকে উঠলেন মহিলাটি। তিনি ভাবতেই পারেননি তার ছেলে তাকে ঘৃণা করতে পারে। তিনি তখন জানতে চাইলেন কেন তুমি আমাকে ঘৃনা করো?
(৪)
সে তখন বললো পৃথিবীর সব থেকে সেরা দেশে তুমি জন্মেছ সব থেকে সেরা জাতীর মানুষ তুমি অথচ কোন দিন সেটা আমাকে বলোনি। আমি একটা জাতির ইতিহাস পড়তে গিয়ে সেই দেশ সেই জাতি সম্পর্কে জেনে আবেগে কেদেছি। বাসায় ফিরে যখন জানলাম তুমি সেই দেশে সেই মাটিতে সেই আলো বাতাসে জন্মেছ অথচ কোন দিন সেই পরিচয় কাউকে দাওনি এমনকি আমাকেও দাওনি তখন তোমাকে আমার ঘৃণা করতেই ইচ্ছে হয়েছে। এমন সোনালী ইতিহাস যারা মনে রাখেনা যারা পরিচয় দিতে লজ্জা পায় তারাতো ঘৃণা পাওয়ারই যোগ্য।ছেলেটির কথা শুনে মহিলার চোখে বহুকাল পর শ্রাবণ ধারা নেমে এলো। তার মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের কথা,নিজের জেলা গাজিপুরের কথা, নিজের বাবা মা ভাই বোনের কথা। সে তখন ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে স্যরি বললো।ক্ষমা চাইলো। ছেলেটি তখন বললো তোমাকে ক্ষমা করতে পারি যদি তুমি আমাকে সেই সোনার দেশে নিয়ে যাও। মা তাতে রাজি হলেন। বাবার তখন খুবই ব্যস্ততা আর ছেলেটির তখন সামার ভ্যাকেশান শুরু হচ্ছে সেই বিশাল ছুটিতে সে মাকে সাথে করে পৃথিবীর সব থেকে সেরা জাতির দেশ তার মায়ের দেশ বাংলাদেশের গাজিপুরে চলে আসলো।
(৫)
মায়ের মুখে সেই বিখ্যাত গাজিপুরের স্হান গুলো দেখার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠলো। ভাওয়াল রাজবাড়ী,
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান (National Park)
আনসার একাডেমী, সফিপুর
নুহাশ পল্লী, জাগ্রত চৌরঙ্গী, বলিয়াদী জমিদার বাড়ী, নাগবাড়ী, চান্দনা, চৌরাস্তা। নাগরী, পাঞ্জুরা চার্চ
রাংগামাটিয়া, তুমিলিয়া, কালীগঞ্জ
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক মন পুড়া পার্ক, কাশিমপুর,গাজীপুর, নাগরী টেলেন্টিনুর সাধু নিকোলাসের গীর্জা। গাজিপুর এবং বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘুরলো অনেক বন্ধু হলো। এক মাসের ছুটি যখন প্রায় শেষ তখন মা বললেন এবার তো আমাদেরকে হল্যান্ডে ফিরে যেতে হবে। ছেলেটি বললো যেতে হয় তুমি যাও আমি যাব না। এই দেশটা এবং এই শহর ছেড়ে আমি পৃথিবীর আর কোথাও যাবনা। আমি বাংলা শিখবো বাংলায় লিখবো বাংলায় পড়বো বাংলায় কথা বলবো। যে ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে সেই ভাষায় কথা বলতে না পারলে আমার জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে। তার মা তাকে কোন ভাবেই রাজি করাতে পারলেন না শেষে তিনি হল্যান্ডে ফোন করে ছেলেটির বাবাকেও বিষয়টা জানালেন তখন তিনি বললেন ঠিক আছে ও তাহলে বাংলাদেশের গাজিপুরেই থাকুক আমিও না হয় ওখানেই চলে আসবো। এই জেলার টানে ফিরে আসে আত্মার সেই বন্ধন অটুট রাখতে। আমার জেলা গাজিপুর, আমার অহংকার।
(সমাপ্ত)
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস