Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

জেলা প্রশাসনের পটভূমি

জেলা প্রশাসনের পটভূমি

শতবর্ষেরনানা ঐতিহ্যে লালিত এক সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক জনপদ (ভাওয়াল), বর্তমান গাজীপুরজেলা যার মধ্যে রয়েছে এক সমৃদ্ধ অতীত। আজ হতে দুই হাজার দুই শত পঞ্চাশবৎসর পূর্বে এই জেলায় মৌর্য সম্রাট অশোকের শাসন কার্যকরী ছিল । তার প্রমাণসাকাশ্বর স্তম্ভ । প্রাচীন যুগ হতে গাজীপুর জেলার ডবাক, ডাকুরাই, সাকেশ্বরপ্রভৃতি ক্ষুদ্র জনপদে পাল, দাস, চেদী, চন্ডালের দ্বারা শাসিত হয় ।জনপদগুলো ক্রমধারায় মুসলিম সময়ে ভাহওয়াল (ভাডয়াল) নামে সুবৃহৎ পরগণায়পরিণত হয় । মধ্যযুগে ভাওয়াল ছাড়াও জেলাতে তালিবপাবাদ, সেলিম প্রতাপ, চাঁদপ্রতাপ কাশিমপুর পরগণার সৃষ্টি হয় ।

ইতিহাসের আলোকে জানা যায়, খ্রিঃ নবম শতাব্দীর দিকে যশোপাল, শিশুপাল, প্রতা ও মহেন্দ্র ভাওয়ালের বিভিন্ন স্থানে স্থানে স্থাপন করেছিলেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্ত রাজা । প্রচলিত কিংবদন্তি অনুযায়ী, এই ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ্যগুলো পরিচিত ছিল চেদী রাজ্য নামে । বর্তমানের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর আংশিক, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ, টংগীসহ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও ও ত্রিশাল উপজেলার অংশ বিশেষ ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার অংশ বিশেষ নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ উপজেলার উত্তরাংশ, টংগীর পশ্চিমে হরিরামপুর ইউনিয়ন নিয়ে এই সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেদী রাজ্যগুলো বিদ্যমান ছিল ।

ভাওয়াল গবেষক জনাব নুরুল ইসলাম (ভাওয়াল রত্ন) নামকরণ প্রসংগে বলেন চন্ডাল রাজাগণের পতনের পর ভাওয়াল গাজীদের অধিকারে আসে । এই এলাকার স্বর্ণপ্রভ অতীত এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে মতান্তরের পরিমাণ যতটা কম, এর নামকরণের ব্যাপারে সংশয়াকীর্ণ মতদ্বৈতার পরিমাণ এতই অধিক যে, বর্তমান ভাওয়ালকে অনেকে ভদ্রপাল বা ভবপাল রাজ্য বলে অনুমান করে থাকেন । মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় এই ভবপাল রাজ্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায় । কারো কারো মতে ভগালয় থেকে ভাওয়াল নামের উৎপত্তি । মহাভারতে ভগালয় নামের উল্লেখ পাওয়া যায় । বহ্ম্রান্ড পুরাণে ভদ্র নামে একটি বর্ণনা আছে । কেহ কেহ এরুপ ধারণা করেন যে, হয়ত এই নাম থেকেই ভাওয়াল নামের সৃষ্টি হয়ে থাকে । কিন্তু একনিষ্ঠ ইতিহাসবেত্তার রহস্যভেদী বিচার বিশ্লেষণের কঠিন পরীক্ষায় এগুলি উর্ত্তীণ হতে পারে নি । এ অঞ্চলের নাম ভাওয়াল, এ কথা প্রথম পাওয়া যায় ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে ।

ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী সেন বংশীয় রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলাদেশ দখল করে অনেকটা নাটকীয়ভাবেই । ফলে মুসলিম শক্তির উত্থান ঘটে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে । এখানে ভাহওয়াল ( ভাওয়াল) গাজীও শক্তিশালী হয়ে উঠেন । ভাহওয়াল নাম পরে ধীরে ধীরে ভাওয়াল নামে পরিচিতি লাভ করে, শেরশাহের সময় ঢাকার উত্তরে চেদী রাজ্যগুলোতে ভাহওয়াল গাজী জমিদারী লাভ করেন । ভাহওয়ালই পরবর্তীতে ভাওয়াল নামে পরিচিতি পায় । ভাওয়াল পরগনার সহায়িত্বকাল ছিল ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তার অন্যতম কর্ণধার মরহুম বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ ভাওয়ালগড় জেলা নামে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিন্যাসের একটি রুপরেখা প্রণয়ণ করেন । ১৯৭২ সালে জেলা গঠনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভাওয়ালগড় জেলা আদায়ের চেষ্টা করে । ১৯৭৮ সালে মহকুমা বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক আ ক ম মোজাম্মেল হক জয়দেবপুরে মহকুমা স্থানান্তরের দাবীটি জোরালোভাবে উত্থাপন করেন । ১৯৭৮ সালে ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠের সভায় ভাওয়াল রত্ম মোঃ নুরুল ইসলাম তাঁর লেখনী দ্বারা ভাওয়ালগড় মহকুমা গঠনের জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেন, নামকরণের জন্য তৎকালীন সরকার কেবিনেট ডিভিশনে একটি কমিটি গঠন করেন এবং পরে গাজীপুর নামটি প্রস্তাবাকারে রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপন করলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন ।